
আমি আরো কিছু বন্ধু আমাদের।সকাল থেকে শুরু করে শেষ বিকেল পর্যন্ত অবধি। কিছু বন্ধু রাত পর্যন্ত থাকেন। দুপুর বেলা ভাত খাইনা কতদিন। আমি একানা,,, ছোটন,জুবায়ের,ফারুক,নোমান,আয়াতুল্লাহ,জুয়েল,জাহিদ,মুহিদ এবং আরো অনেকে। আমরা কয়জন রুবেলের দোকানের সিংগারা আর সহিদের দোকানের চা' খেয়ে থাকি। মাযেদ,সারাফাত,জুয়েল থাকে সিগারেট আর চা'র উপর।মাঝে মাঝে জাহিদ ওদের সাথে যোগ হয়। তখন সিগারেটের দোঁয়া আর যাপশা আকাশের দৃশ্য।
নোমান ভাই থাকেন পেপ্সি আর বেন্সন সিগারেটের উপর। জুবায়েরটা কৌতুহোলি। মাঝে মাঝে সে নোমানের সাথে সিগারেট শেয়ার করেন। ওর ভাবসাব অন্যরকম,। কখন কি করেন বুঝিনা।হঠাৎ এসে সিগারেট খোরদের সিগারেট কিনে দিচ্ছেন; নিজ়েও খাচ্ছেন। অনেকটা জন পতিনিধির মত।আমাদের এলাকার ছেলে ও। একটা সময় এমন ছিল যে, ও নিজ়েই চিন্তা করতে পারতোনা
ও এমন সিগারেট খোর হয়ে যাবে। আপন কৌতুহলে ও সিগারেট ধরল।ওকে সিগারেট ছাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আমি আর ছোটন চেষ্টা করছি।
আমাদের মধ্যে ছোটনটা পড়া লিখার ব্যাপারে একটু বেশি সিরিয়াস। আনিস ও একটু। জুয়েলটা ইমোশনাল টাইপের। যখন পাড়ালিখার কথা উঠে তখন ও সবার আগে থাকেন। কিন্তু ও কাজ়ের দিন আসেননা। পরীক্ষার আগে আমাদের পড়ালিখাটা একটু বেশি হয় অন্য সময়ের তুলনায়। বিশেষ করে ডিস্কাশন। কখনও ফারুক,কখনও আমি আবার কখনও আমাদের বন্ধুদের মধ্যে যে কেউ শুরু করেন। ঘন্টার পর ঘন্টা চলে। মাঝে মাঝে বিরতি। সহিদের দোকানে চা' খাওয়ার পাল; আর সিগারেট খোরদের সিগারেট।। তারপর আবার শুরু। এভাবে চলে সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত।এখন পরীক্ষা চলছে; তাই এমন।
যখন ক্লাস শুরু হবে তখন চিত্রটা অন্য রকম। প্রত্যেক ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে লেকে আসতেই হবে। এ যেন অনেকটা অত্যাবশ্যক কাজ। না করলে মার খেতে হবে।নোমান,সারাফাত,মাযেদ একটা মিনিট ও থাকতে পারেন্না ক্লাসের পর। সবাই মিলে আড্ডা;হাসি তামাশা। মাযেদের; ওর আন্টিদের সাথে চোখাচুখি আর হাসি বদল। জুয়েলের হাস্যকর সব মন্তব্য।মাযেদটা একটু বেশি মজার। ছোট বোন,বড় বোন, ইয়ার মেট এবং আন্টিরা; কার রেহায় নেই ওর মন্তব্য থেকে। আর হাজার খানেক জি এফ আছে ওর। হাজার খানেক সিমও।
পরাগটা বাদ পডে গেল বুজি। আর একজন বন্ধু আমাদের। খাওয়ার ব্যাপারে ও সিরিয়াস। কে এফ সি, স্টার কাবাব এ সবে গিয়ে খাবে ও। প্রধান বন্ধু হচ্ছে ওর বেন্সন সিগারেট। প্রত্যেক দিন প্রায় ২টা পেকেট সামাল দেয় ও।
আর একজন ফারুক আছে আমাদের মধ্যে। দুলাভাই বলি ওকে আমরা। বিয়ে করেছে ও একটা ফুটফূটে সুন্দরী বউ। ভীষন খুশি ও ওর বউকে নিয়ে। একটু হুজুর টাইপের। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। এখন ভীষন ব্যাস্ত হয়ে গেছে। জিজ্ঞেস করলে বলে,বউকে সময় দিতে হয়। বউ যেতে দিতে চায়না।। আরো কত কি।
প্রায় শেষ করে পেলেছি আমাদের গ্রেজুয়েশন। বন্ধুরা অনেকেই কোথায় কে চলে যা্বে কে জানে।। তবুও আমরা আমাদের ক্যাম্পাস,লেক,রুবেলের দোকান আর সহিদেরর চা' অনেক মিস্ করব।
ছোটনের জন্য লেখা বাকি সব। ওর ইন্সপাইরেশন পেয়ে আবার লিখার চেষ্টা করলাম।ছোটনের ইন্সট্রাকশন মত এবার আনিস দিয়ে শুরু।ক্লাসে সব কিছু ও নোট করবে। কেউ যদি কখনও কিছু মিস্ করে সেটা আনিসের খাতায় খুঁজলে পেয়ে যাবে।ইংরেজীতে তাড়াতাড়ি লিখতে না পারলে বাংলায় লিখবে ও।
কিন্তু না লিখে চাড়বেনা। এটার মাধ্যমে আমরা সবাই উপকৃত হই। ওকে আমি অনেক কথা বলি ওর ভাবীকে নিয়ে।ওর বড় ভাই,যিনি বি,বি,এ ডিপার্টমেন্টের হেড উনার বউকে নিয়ে। সব মজার জন্য বলা। অনিস কখনও রাগ করেনা। ও হাসে এবং আমরা সবাই হাসি। মাঝে মাঝে আনিস আমাকে বলে, "আচ্ছা রিমন,তুমি যা বল এসব যদি বাহিরের কেউ শুনে তাহলে কি ভাববে বলত" ।আমি বলি মানুষ সবাই তার নিজ়ের ইচ্ছা মত ভাবতে পারেন। এতে তোমার আমার কি আসে যায়...? এর পর ও হাসে।সব থেকে নজর কাড়া ব্যাপার হল আনিসের খাওয়া। কাঠবিড়ালীর মত কূটুকূটু করে শম্বুক গতিতে খাবে ও। ও একটা সিংগারা খেটে যা সময় লাগে সেই সময়ে অন্য যে কেউ কমপক্ষে পাঁচটা খেতে পারবে।। চস্ ওর ভীষণ প্রিয় একটা খাওয়ার।
আয়াত, আমাদের মজার বন্ধু ও। আমি আর ও একত্র হলে,যত বড় বাটপারই হোক; আমাদের কাছে তর্কে হারতে হবে।ব্যাবসায়ীক মাইনডের ও। সবকিছুতে প্রপিট খুঁজ়ে । পড়া লিখের চেয়ে ব্যাবসায় সময় বেশি দেয়। ভবিষ্যতে ভালো ব্যাবসায়ী হতে পারবে।ওকে দিয়ে আড্ডা জমে। মানুষকে অপ্রস্তুত করার ওস্তাদ ও।
মাযেদ এবং জুয়েল। যাদের কথা না বললেই নয়। মাযেদটা যত ভাল কথা অথবা যত খারাপ কথা বলুক;ওটার সাথে খুব সুন্দর করে একটা গালি মিক্স করে দিবে। জুয়েলটা একটু স্মার্ট টাইপের গালি দেয়।অনেকটা সাহিত্যিক স্টাইলে।। একটা কথা বললে বুঝা যাবে। এবার ওদের একটা সাবজ়েক্টের প্রশ্ন একটু কঠিন হয়েচে।পরীক্ষার হল থেকে বের হওয়ার পর ওকে জিজ্ঞেস করলাম,"জুয়েল মামা,পরীক্ষা কেমন হল...?"। ও উত্তর করল," কবি নূরুল হুদা আমাদের কে দিয়েছে 'এন আনক্লিন ব্যামবো উইদ আউট বেজেলিন' "।।ওর সকল মন্তব্য এমনি;শুনলে কেউ না হেসে থাকতে পারেনা।
মুহিদ,আমাদের সকল বন্ধু থেকে ও একটু আলাদা ঘোছের। মানসিকতা ওর অনেক ভাল। অন্য আট দশ জনের মত ও প্যাঁচ করেননা কোন কিছুতে। ও জানে সবার থেকে বেশি, কিন্তু খাতায় লিখেন সবার থেকে কম। এটার কারনে মুহিদ তার প্রাপ্তিতে যেতে পারেনা। ওর একটা গুন এবং দোষ হল, সব কিছুতে ও এলাবরেট ডিস্কাশন করেন। এটা আমাদের বন্ধুদের অনেকে পছন্দ করেন আবার অনেক করেননা। ও হল চার পাঁচ জন ভাবীর ছোট দেবর এবং ওর সকল ছাত্রীর প্রিয় স্যার। এসব নিয়ে আমি মাঝে মাঝে ওর সাতে পাজিলামিকরি। ও ভীষণ লজ্জা পায়। ঠিক মনে হইয় যেন একটা লাজুক বানর।।
ফারুক, সবচাইতে ব্রিলিয়েন্ট। আমাদের ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের এক মাত্র ছাত্র,যিনি বিদেশী ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশীপ পেয়েছেন। আমাদের সাথে উনি আছেন বলে আমরা অনেক গর্ববোধ করি। অনেক পলাপান উনি মানুষ করেছেন।। অবশ্য ফারুক কোন ছেলেকে পড়াননা। ছাত্রী পড়ান। অনেক ভাল স্যার। অনেক মেয়েকে A+ পাইয়েছেন উনি। অবশ্য এসব নিয়া আয়াত উনাকে আর বাকি রাখেননা কিছু।। রবীন্দ্রনাথ & নজরুল সংগীতের কিছু মনে হয় বাকি নাই উনার। অনেক গান মুখস্ত পারেন উনি। আমরা অনেক গান শুনেছি উনার গলায়। চমৎকার গায় ফারুক।
মাহিব,ডাবল A+ দারি ও (ssc & HSC) । কিন্তু ওর মত এত ক্লাস মিস আমাদের আর কোন বন্ধু করেন কিনা বলতে পারিনা। মনে হয় করেননা। যখন ক্লাসে আসেন সেই দিন ওর এপয়েন্টমেন্ট থাকেন। মাঝে মাঝে সব ক্লাস শেষ হওয়ার আগেই ভাগেন ও। একটা মেয়ের প্রেমে পডছে ও।ইডেনে পড়ুয়া এ মেয়েটির পিছনে ও দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ওর না থাকে সময়,আর না থাকে শক্তি। বন্ধুদেরকে কোন সময় দিতে পারেনা ও। যখনি ওকে কেউ বসতে বলল, অমনি বলে উঠে "আজ আসিরে দোস্ত;আমার একটা জুরুরি কাজ আছে"।।
ছোটন,যার কারণে বাকি অংশ লিখা। আমাদের অনেক ভাল বন্ধু ও এবং আমাদের ক্লাসের নিয়মিত ছাত্রদের একজন। ক্লাসে খুব মনোযোগি ও। সকল টপিক বুজার চেষ্টা করে। ও অনেক কর্মঠ। পেমেলি এবং বন্ধু,সবাইকে ও সময় দেয়। পেমেলির অনেক কিছু ওকে করতে হয়।ওর এত সব্ ভাল দিকের জন্য ওকে আমার ভীষন ভাল লাগে। আমরা দু'জন এক সাথে অনেক কাজ করছি।এ যেমন শপিং,গুরাগুরি,আড্ডাবাজি....................................।
আমার নিজ়ের সম্পর্কে বলার মত কিছু বাকি রাখলামনা। সবার ফাকে ফাঁকে কম বলিনি। বাকি সব সকল বন্ধুদের কাছে।।............।।
অনেক গুলো অনুষ্ঠান হয়েছে আমাদের বন্ধুদের মাঝে। কারো জন্মদিন আসলে সকল বন্ধুকে খাওয়ানো। কারো ছোট ভাই বোন ভালো রেজাল্ট করলে খাওয়ানো। কারো জি,এপ ভালো কিছু করলে। এভাবে একটার পর একটা অনুষ্ঠান লেগেই থাকে আমাদের মাঝে। তখন আমরা অনেক মজা করেই কাটাই।